হাবিবুর রহমান সম্রাট তালুকদার উপজেলা প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বাগবাড়ি গ্রামে সংঘটিত ডাকাতি মামলায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ভূঞাপুর থানা পুলিশ। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাতির মালামালের একটি অংশও।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি রাতে ভূঞাপুর উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামের মো. দুলাল মেম্বারের বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়। আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্যরা ওই রাতে পরিবারের সদস্যদের হাত-পা বেঁধে নগদ ১ লাখ টাকা, ১ ভরি স্বর্ণের চেইন, ৮ ভরি রুপা ও অন্যান্য মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরদিন ১৯ জানুয়ারি ভূক্তভোগী দুলাল ভূঞাপুর থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ২৭ জুলাই অভিযান চালিয়ে বাসুদেবকোল গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে ইসমাইল হোসেন ওরফে নানু, রহমানের ছেলে আতিক হোসেন (২৫) , হাবিবুর রহমানের ছেলে ইমান আলী (৩০) ও খাস বড়য়া গ্রামের মোখলেছের ছেলে মো. আরিফুল ইসলাম (২২) কে গ্রেফতার করে।
তাদের দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, বাগবাড়ি গ্রামের সেকান্দরের ছেলে কোচিং শিক্ষক রাসেল পারভেজ স্বাধীন ও একই গ্রামের আজিজ জোয়াদ্দারের ছেলে বাগবাড়ি হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষক মনির জোয়াদ্দার ডাকাতি সংগঠিত করার মূল পরিকল্পনাকারী।
মনির জোয়াদ্দার মাদরাসায় না পড়েও হাফেজিয়া মাদরাসায় মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে চাকুরি করেন।
রাসেল পারভেজ স্বাধীন কোচিং-এ শিক্ষকতা করা অবস্থায় তিন বছর আগে এস এস সি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাসের কারনে তাকে জেলেও যেতে হয়েছিল। তার বাবা সেকান্দার বাঁশি বাজিয়ে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তার বাড়িতে বিল্ডিং হয়ে গেছে।
এই দুই জন মিলে দুলাল মেম্বারের বাড়িতে ডাকাতির জন্য ডেকে আনে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্যদের। তাদের সবার বাড়ি যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলে। যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি ছিনতাই নদী পথে ডাকাতি করে থাকে। এইসব ডাকাতদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে স্বাধীন। তার সঙ্গী হিসেবে নেয় মাদরাসা শিক্ষক মনিরকে।
ঘটনার রাতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে তাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে নলিন বাজার দিয়ে বাগবাড়ি স্কুল মাঠে আসে। পরিকল্পনা মোতাবেক সেখানে আগে থেকেই এই দুইজন অবস্থান করছিল। ওই ডাকাত দলকে বুঝানো হয়েছে দুলাল মেম্বারের কাছে এই মুহূর্তে অনেক টাকা আছে তিনি বিল্ডিংয়ের কাজ করেছেন। তাদেরকে তখন মুখোশ, হাতুড়ি, প্লাস, দড়িসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করে দেয়। তারা স্কুল মাঠে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত অবস্থান করে। তখনও দুলাল মেম্বার বাড়ির বাহিরে অবস্থান করছিলেন। মনির নজর রাখছে কখন দুলাল মেম্বার বাড়িতে ঢুকে। এদিকে তাদের পরিকল্পনা চলছে কি ভাবে বাড়িতে ঢুকবে। বাড়ির চার পাশের কোন জায়গায় পাকা দেয়াল আবার কোনো জায়গায় টিনের বেড়া। বাগবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন পাকা রাস্তার পূর্ব অংশে পরিপাটি এই বাড়ির দক্ষিণ অংশের ইট ভাটার মাটির উঁচু ভিটি দিয়ে দেয়াল টপকে বাড়িতে ডুকে।
ইতিমধ্যে দুলাল মেম্বার বাড়িতে ঢুকে খাবার বসেছেন। রাত ১০টা বাজে। বাড়িতে শুধু মেম্বার ও তার স্ত্রী। ডাকাত ঘরে প্রবেশ করেই তাদের দুজনের হাত পা মুখ বেঁধে ফেলে অমানুষিক নির্যাতন করে। প্রায় ঘন্টা ব্যাপি সমস্ত বাড়ি ঘর তছনছ করে মালামাল নিয়ে চলে যায়।
ঘটনার ছয় মাস পর পুলিশের বিশেষ তৎপরতায় আসামীদের সনাক্ত করে চার জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
অপরদিকে এতদিন এই মাদরাসা শিক্ষক মনির আর কোচিং শিক্ষক স্বাধীন তাদের নিজ বাড়িতে থাকলেও আসামি ধরার সাথে সাথে গা-ঢাকা দিয়েছে।
ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম রেজাউল করিম জানান, এই দুই শিক্ষকের নামে কোনো মামলা নাই। তবে তারা দুইজন যদি পালিয়ে থাকে আমাদের কি করার আছে? যাদের কে গ্রেফতার করেছি তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে এবং ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।
সরোয়ার হোসেন কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত