মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া অঞ্চলের দুই স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং ব্রাইটস্টার মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গাইড বই নিয়ে চলমান অনিয়ম ও বাণিজ্যিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী ও সাধারণ মানুষের দাবি, প্রতিষ্ঠান দুটির কয়েকজন শিক্ষক উৎকোচ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের ওপর নিম্নমানের গাইড বই চাপিয়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে রুহিয়া ব্রাইটস্টার মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অশ্বিনী চন্দ্র বর্মন এবং রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মোকসেদ আলী ও প্রফুল্ল মাস্টারের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠে এসেছে। রুহিয়া স্টুডেন্ট লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী রুস্তম আলী জানান, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় তার সাথে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার গাইড বই সরবরাহের চুক্তি করে। এর মধ্যে শিক্ষক মোকসেদ আলী ও প্রফুল্ল মাস্টার মিলে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন এবং বাকি টাকা অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। অথচ বিক্রি হয় মাত্র ৪৮ হাজার টাকার গাইড বই, ফলে বাকি অর্থ নিয়ে লোকসানে পড়েন তিনি।
রুস্তম আলীর অভিযোগ, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে তার গাইড বই ব্যবহারের আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে সেই দুই শিক্ষক “কিশোর লাইব্রেরি” নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে নতুন চুক্তি করেন। অভিযোগ রয়েছে, ঐ গাইড বইগুলো নিম্নমানের এবং কেবল দিনাজপুর অঞ্চলের মধ্যে রুহিয়ায় অবস্থিত কিশোর লাইব্রেরিতেই পাওয়া যায়। এ বিষয়ে রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও রুহিয়া ব্রাইট স্টার এর একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে, এর সত্যতা পাওয়া যায়।
রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম, সৈকত ও রুহিয়া ব্রাইট স্টার মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাজ বর্মন, শরৎ চন্দ্র বর্মন জানায়, আমরা স্যারদের দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী পপি গাইড কিনেছি যা অনেক নিম্ন মানের। রুহিয়া ব্রাইট স্টার এর অভিভাবক আবু হানিফ বলেন, প্রতিষ্ঠান থেকে আমার ছেলেকে গাইড বই নিতে বাধ্য করেছে শিক্ষকেরা। এছাড়াও অনেক অভিভাবক প্রশ্ন তুলেছেন, যদি শিক্ষকই উৎকোচ নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে নিম্নমানের বই তুলে দেন, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেমন শিক্ষায় বড় হবে?” এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকার শিক্ষার মান ও ভাবমূর্তি বহন করে। সেখানে ঘটে যাওয়া এমন অনৈতিক কার্যকলাপ পুরো এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাইটস্টার মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অশ্বিনী চন্দ্র বর্মন অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোকসেদ আলী আংশিকভাবে অভিযোগ স্বীকার করলেও প্রফুল্ল মাস্টার তা এড়িয়ে যান।
রুহিয়া কিশোর লাইব্রেরির সত্ত্বাধিকারী একরামুল হক চৌধুরী বলেন, পপি কোম্পানির দিনাজপুর অঞ্চলের একমাত্র পরিবেশক আমি। এখন উৎকোচ এর বিনিময়ে গাইড বই প্রদান করা কোম্পানির এখতিয়ার। আপনারা কোম্পানির প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে পারেন। পপি কোম্পানির এলাকা প্রতিনিধি কুদরত আলী তার ব্যস্ততা দেখিয়ে মুঠোফোনের লাইনটি কেটে দেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান বলেন, যদি কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী আমার বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেন, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।