তানিম আহমদ, স্টাফ রিপোর্টার,
মৌলভীবাজারে আলোচিত আইনজীবী সুজন মিয়া হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশ। এদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নজির মিয়া, মুজিব-সহ আরও চারজনকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে ৬ এপ্রিল ২০২৫, রাত আনুমানিক ১০টা ৫০ মিনিটে, মৌলভীবাজার পৌরসভার পশ্চিম পাশে, শহরের মূল সড়কের পাশের ফুটপাতে। তামান্না নামের একটি ভাসমান ফুচকা দোকানের পাশে বসে থাকা অবস্থায় আইনজীবী সুজন মিয়াকে একাধিক দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই এনামুল হক সুমনের দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে (মামলা নং-১৫, তারিখ ০৮/০৪/২০২৫, ধারা-৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি) পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন (পিপিএম-সেবা)–এর তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপারেশনস) নোবেল চাকমার নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষ দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। থানা এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযানে নেতৃত্ব দেন ওসি গাজী মোঃ মাহবুবুর রহমান, তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মিনহাজ উদ্দিন এবং এসআই সামছুল ইসলাম।
অভিযানের এক পর্যায়ে ৯ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয় মামলার মূল পরিকল্পনাকারী নজির মিয়া, মুজিব (২৫), সহযোগী মোঃ আরিফ মিয়া (২৭), হোসাইন আহমদ, সোহান (১৯), লক্ষন নাইডু (২৩), এবং আব্দুর রহিম (১৯)-কে। নজির মিয়ার কাছ থেকে ঘটনার সময় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, নজির মিয়ার পূর্ব শত্রুতা ছিল তার প্রতিবেশী ও ব্যাংক নিরাপত্তারক্ষী মিসবাহের সঙ্গে। মূলত তাকে লক্ষ্য করে হত্যার পরিকল্পনা হলেও ভুলবশত সুজন মিয়াকে হত্যা করা হয়। দুই বছর আগে চাদনীঘাট এলাকার এক হোটেলে কাজ করার সময় নজিরের পরিচয় হয় দুধ ব্যবসায়ী লক্ষনের সাথে। লক্ষনের মাধ্যমে সে মিসবাহকে হত্যার জন্য অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে।
ঘটনার রাতে বানিজ্য মেলার ভিড়ে সুজন মিয়াকে ভুল করে টার্গেট ধরে আব্দুর রহিম ভিডিও কলের মাধ্যমে নজির মিয়াকে দেখায়। দৃশ্য দেখে নজির নিশ্চিত হলে খুনের নির্দেশ দেয়। এরপরই ভাড়াটে হামলাকারীরা সুজনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে আরও ১০-১২ জনের সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং তাদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
জেলা পুলিশ জানিয়েছে, মৌলভীবাজারে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা বদ্ধপরিকর এবং এই ঘটনার সকল দোষীদের আইনের আওতায় আনতে তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।